ঘরের মাঠে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুই ম্যাচ সিরিজের প্রথম টেস্টে খালেদ-শরিফুলদের ব্যাটিং দৃঢ়তায় সিলেট টেস্টে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ১৮৮ রানে থেমেছে বাংলাদেশ। এতে ৯২ রানের লিড নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নামে সফরকারী শ্রীলঙ্কা। যেখানে বড় লিডে চোখ রেখে দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষ করেছিল লঙ্কানরা। সেই ধারা বজায় রেখে তৃতীয় দিনে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিসের শতকে লঙ্কানরা ৪১৮ রানে থামে। তাতে বাংলাদেশের সামনে দাঁড়ায় ৫১১ রানের লক্ষ্য।

সেই লক্ষ্য তাড়া করা জয় পাওয়া প্রায় অসম্ভব। কেননা টেস্ট ক্রিকেটে রান তাড়ার বিশ্বরেকর্ড ৪১৮ রানের।দৃষ্টিকটু ব্যাটিংয়ে তৃতীয় দিন শেষেই সিলেট টেস্টে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বড় হারের শঙ্কায় আছে বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ইনিংসে ৫ উইকেটে ৪৭ রান নিয়ে দিন শেষ করেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল। জিততে হলে করতে হবে আরও ৪৬৪ রান।

রান তাড়ায় নেমে ৯ রানের মধ্যে সাজঘরে ফেরেন ওপেনার মাহমুদুল হাসান জয় এবং অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। জয়ের আউটটা তবু মানা যায়। বিশ্ব ফার্নান্ডোর বলে এলবিডব্লিউয়ের ফাঁদে পড়েছেন এই ওপেনার (০)। রিভিউ নিয়েও কাজ হয়নি।

তবে অধিনায়ক শান্ত যেভাবে আউট হলেন, সেটাকে দায়িত্বজ্ঞানহীনতা বলতে হবে এক কথায়। কাসুন রাজিথার অফস্টাম্পের অনেক বাইরে বলে ড্রাইভ খেলে স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফিরে আসেন শান্ত (৬)।

অধিনায়কের দেখানো পথ ধরে জাকির হাসান, শাহাদাত হোসেন দিপুরা দ্রুতই ফিরেছেন। জাকির আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে খেলছিলেন, তবে সেই আত্মবিশ্বাসী ইনিংসটা থেমেছে ১৯ রানেই। লাহিরুর কুমারার বলে ব্যাট ছুঁইয়ে উইকেটরক্ষককে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন জাকির।

শাহাদাত হোসেন দিপুও সুইংয়ে বিভ্রান্ত। বিশ্ব ফার্নান্ডের বলে ব্যাট ছুঁইয়ে দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়েছেন শূন্য করেই। ঠিক পরের বলেই লিটন দাস যেভাবে খেললেন, চোখ কপালে ওঠার মতো।]

দলের বিপর্যয়ে হাল ধরবেন কি, ডাউন দ্য উইকেটে ছক্কা হাঁকাতে গিয়েছিলেন লিটন। ফল যা হওয়ার তাই হয়েছে, বল সোজা উঠে যায় আকাশে। সহজ ক্যাচ নেন ম্যাথিউস। গোল্ডেন ডাক লিটনের। ৩৭ রানে ৫ উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

এর আগে দ্বিতীয় ইনিংসে ৯২ রানের লিড নিয়ে ব্যাটিংয়ে নেমে শুরুটা মন্দ হয়নি লঙ্কানদের। তবে দলীয় ১৯ রানের মাথায় নিশান মাদুশঙ্কাকে ফিরিয়ে বাংলাদেশকে কিছুটা স্বস্তি দেন অভিষিক্ত পেসার নাহিদ রানা। ২০ বলে ১০ রান করে লিটনের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন এই ডানহাতি ব্যাটার। এরপর চা বিরতিতে যায় উভয় দল। চা বিরতি পর্যন্ত শ্রীলঙ্কার লিড হয় ১১১ রান। চা বিরতির পর আবারও লঙ্কান শিবিরে আঘাত হেনেছেন রানা। এবার তার শিকার কুশল মেন্ডিস। রানার করা বাউন্সার পুল করতে গিয়েও শেষ মুহূর্তে ছেড়ে দিতে গিয়ে ব্যাট ছুইয়ে দেন কুশল। ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল চলে যায় লিটন কুমার দাসের গ্লাভসে। ১০ বলে ৩ রান করে ফিরেছেন মেন্ডিস।

এরপর অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসকে নিয়ে সেই চাপ সামাল দেন করুনারত্নে। এই দুইজনের ২৮ রানের জুটি থামান তাইজুল। ম্যাথিউসকে আউট করে নিজের প্রথম উইকেট তুলে নেন এই বাঁহাতি স্পিনার। ম্যাথিউসের বিদায়ের পর আরও বড় ধাক্কা খায় লঙ্কানরা। এবার বিদায় নেন অভিজ্ঞ দিনেশ চান্দিমাল। মিরাজের বলে এলবিডব্লিউ হয়ে ফেরেন তিনি। চার উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া দলকে টেনে তোলার দায়িত্ব নেন করুনারত্নে। এক প্রান্ত আগলে রেখে সাবলীল ব্যাটিং করে যান এই বাঁহাতি ব্যাটার। তার সঙ্গে যোগ দেন অধিনায়ক ধনঞ্জয়া ডি সিলভা।

এই দুইজনের ব্যাটিংয়ে ভর করে ভালো সংগ্রহ পায় শ্রীলঙ্কা। দিনের একেবারে শেষদিকে করুনারত্নেকে ফেরান শরিফুল। ১০১ বলে ৫২ করে ফেরেন তিনি। এরপর ফার্নান্দোকে নিয়ে দ্বিতীয় দিনশেষ করেন ধনঞ্জয়া। তৃতীয় দিনের শুরুটা ভালো হয়নি লঙ্কানদের। দিনের তৃতীয় ওভারেই খালেদের বলে স্লিপে থাকা মিরাজের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন বিশ্ব ফার্নান্দো। ২৪ বলে ৪ রানের বেশি করতে পারেননি তিনি। এরপরই পাল্টে যায় দৃশ্যপট। বাংলাদেশের বোলারদের কোনো পাত্তা না দিয়ে কামিন্দু মেন্ডিসকে নিয়ে ফের বড় জুটি গড়েন ধনঞ্জয়া।

১৬৪ বলে সেঞ্চুরি তুলে নেন ধনঞ্জয়া। তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রান তোলে কামিন্দু। মাঝে অবশ্য ২-৩ বার বাংলাদেশের ভুলে জীবন পান ধনঞ্জয়া। শেষমেশ বহু চেষ্টার পর দলীয় ২৯৯ রানের মাথায় মিরাজের বলে তুলে মারতে গিয়ে জাকির হাসানের হাতে ক্যাচ দেন ধনঞ্জয়া। সাজঘরে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১৭৯ বলে ১০৮ রান। এটি ধনঞ্জয়ার টেস্ট ক্যারিয়ারের ১১তম সেঞ্চুরি।

তার বিদায়ে ভাঙে এই জুটির ২৭৩ বলে ১৭৩ রানের জুটি। ধনঞ্জয়ার বিদায়ের পরও রানের চাকা থেমে থাকেনি লঙ্কানদের। প্রভাত জয়সুরিয়াকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নেন কামিন্দু। ১৭১ বলে তুলে নেন সেঞ্চুরি। এটি তার ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। এরপর দলীয় ৩৬৬ রানে জোড়া উইকেট হারায় শ্রীলঙ্কা। প্রবাথ জয়সুরিয়া ৪৭ বলে ২৫ ও লাহিরু কুমারা রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরে ফিরে যান।

তবে একপ্রান্তে আগ্রাসী ব্যাটিংয়ে দেড়শো রান পূর্ণ করেন কামিন্দু। শেষ ব্যাটার হিসেবে ২৩৭ বলে ১৬৪ রান করে কামিন্দু আউট হলে ৪১৮ রানে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। ৫১০ রানের লিড পায় লঙ্কানরা। বাংলাদেশের হয়ে বল হাতে সর্বোচ্চ ৪ উইকেট নেন মেহেদী হাসান মিরাজ।